আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
হুকুকুল ইবাদ বা বান্দার অধিকার এর সাথে সম্পৃক্ত গুনাহ থেকে তওবা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হল: অন্যায়ভাবে অর্জিত সম্পদ মালিককে ফেরত দেওয়া এবং এটা থেকে মুক্ত হওয়া। দলিল হচ্ছে— আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্মানহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়; সে দিন আসার পূর্বে যে দিন কোন দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) বা দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম থাকলে সেটা থেকে তার যুলুমের পরিমাণ কেটে নেয়া হবে। আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপের কিছু তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।"[সহিহ বুখারী (২৪৪৯)]
যখন কোন মানুষ কারো সম্পদ চুরি করে এবং তার পক্ষে তাকে জানানো কঠিন হয়ে যায় কিংবা জানালে সংকট আরও বাড়ার আশংকা থাকে; যেমন— তাদের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া; সেক্ষেত্রে জানানোটা আবশ্যকীয় নয়। বরং সম্ভাব্য যে কোন পদ্ধতিতে তাকে সম্পদটা ফিরিয়ে দিবে; যেমন তার একাউন্টে জমা করে দেওয়া কিংবা এমন কাউকে দেওয়া যে তার কাছে পৌঁছিয়ে দিবে কিংবা এ ধরণের অন্য কোন মাধ্যমে।
দুই:
প্রশ্নকারীর উপর আবশ্যকীয় তার দাদা-দাদীর ওয়ারিশদের কাছে সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া; এমনকি সেটা তার পক্ষে কঠিন হলেও; যেহেতু এটি সম্ভবপর। কঠিন হলেও সম্ভবপর হওয়া, আর ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভবপর না হওয়া—দুটো বিষয়ের মাঝে পার্থক্য আছে। যদি সম্পদ তার মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভবপর হয় তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যকীয়; কেননা তারাই এর হকদার। এ সম্পদ খরচ করার অধিকার তাদেরই। তাদেরকে না জানিয়ে তাদের সম্পদ দান করা জায়েয নয়; এমনকি আপনারা যে দেশে আছেন সে দেশে গরীবদের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও। কারণ কোন ব্যক্তির জন্য অন্যের সম্পদ থেকে তার অজান্তে গরীবদের মাঝে দান করা সঙ্গত নয়। সে নিজের সম্পদ থেকে যা খুশি দান করতে পারে।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: "সম্পদগুলো মালিকদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে; যেহেতু তারা চেনা ব্যক্তি কিংবা তাদের ওয়ারিশগণ চেনা ব্যক্তি। পক্ষান্তরে, আপনি যদি তাদেরকে ভুলে যান কিংবা মূলতঃই না চেনেন কিংবা তাদেরকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আপনি নিরাশ হয়ে পড়েন— সে ক্ষেত্রে আপনি তাদের পক্ষ থেকে দান করে দিন। কিন্তু, তারা যদি চেনা মানুষ হয় কিংবা তারা মারা গেছেন তবে তাদের ওয়ারিশগণ চেনা হয়; কারো জন্য হয়ত তাদের কাছে গিয়ে বলা: 'আমি তোমাদের কাছ থেকে এ সম্পদগুলো অবৈধভাবে গ্রহণ করেছি, আপনারা আমার তওবা গ্রহণ করুন এবং সম্পদগুলো গ্রহণ করুন'— সমস্যা হতে পারে। এ দিক থেকেও এটা কঠিন হতে পারে যে, শয়তান হয়তো তাদের মনে ঢুকিয়ে দিবে যে, তুমি এর চেয়ে বেশি সম্পদ নিয়েছ ইত্যাদি। তাই, আপনি একজন আস্থাভাজন, বুদ্ধিমান ও দ্বীনদার মানুষ খুঁজে নিন। তাকে বলবেন: ভাই, বিষয়টি এমন এমন। অমুকের এই পাওনা আছে কিংবা সে মারা গিয়ে থাকলে তার ওয়ারিশদের এই পাওনা আছে। আশা করি সে ব্যক্তি আপনাকে দায়মুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন এবং যাদের পাওনা তাদের সাথে যোগাযোগ করে বলবে যে, ভাই! এই ব্যক্তি আল্লাহ্র কাছে তওবা করেছেন। তিনি তোমাদের এত এত সম্পদ অন্যায়ভাবে নিয়েছেন। এই নাও সে সম্পদ। এভাবে তার দায়মুক্ত হবে। কারণ আলেমগণ বলেন: যে সম্পদের মালিক চেনা; সে সম্পদ তার মালিকের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে।"[আল-লিকা আস-শাহরি, নং-৩১ থেকে সমাপ্ত]
আর জানতে দেখুন: 148902 নং প্রশ্নোত্তর।
যদি মানুষ সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় করে এবং মানুষের হক পরিশোধ করে দেয়ার চেষ্টা করে তখন নিশ্চয় আল্লাহ্ তার জন্য সহজ করে দিবেন। যতই তার কাছে মনে হোক না কেন বিষয়টি কঠিন।
প্রশ্নকারীর বক্তব্য: "তিনি মনে করেন যে, এ সম্পদ দান করলে তারা দুইজনের কাছে সওয়াব পৌঁছবে।"
এ সম্পদের উপর এখন আর তার দাদা-দাদীর মালিকানা নাই। বরং এর মালিকানা এখন ওয়ারিশদের।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।