শনিবার 20 জুমাদাল ছানী 1446 - 21 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মীমাংসামূলক নামায

প্রশ্ন

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মীমাংসামূলক নামাযের শুদ্ধতা কতটুকু? সেটা হচ্ছে: দুই রাকাত নামায পড়া। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া এবং সাতবার "সম্ভবত আল্লাহ্‌ তোমাদের মধ্যে এবং তাদের মধ্য থেকে যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা আছে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ্‌ সবকিছই করতে সক্ষম। আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু" আয়াতটি পড়া। নামায শেষ করার পর দোয়া করা: "হে আল্লাহ্‌! অমুকের ছেলে অমুকের (স্বামীর নাম) অন্তর অমুকের মেয়ে অমুকের (স্ত্রীর নাম) উপর কোমল করে দিন; যেভাবে আপনি দাউদ (আঃ) এর জন্য লোহাকে কোমল করে দিয়েছেন"।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

ইসলামী শরিয়তে "স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মীমাংসামূলক" কোন নামায নাই। এ দোয়াটিও সাব্যস্ত নয়। কোন মানুষের জন্য কোন ইবাদত প্রণয়ন করা জায়েয নয় কিংবা শরিয়তে যা নেই এমন কিছুকে শরিয়তের দিকে সম্বন্ধিত করা জায়েয নয়।

অবএব, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ মীমাংসার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ নামায পড়া শরিয়তসম্মত নয়। বরং উল্লেখিত উদ্দেশ্য ও পদ্ধতিতে এ নামায প্রত্যাখ্যাত বিদআত।

তবে উল্লেখিত দোয়াটি কিংবা অনুরূপ কোন দোয়া যা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে; যেমন এভাবে বলা যে: "হে আল্লাহ্‌! আমার নিকট আমার স্বামীকে প্রিয় করে দিন এবং আমাকে তার কাছে প্রিয় করে দিন" যদি কোন নারী স্বাভাবিক ফরয নামাযে কিংবা নফল নামাযে পেশ করেন তাহলে কোন অসুবিধা নেই।

অনুরূপ বিধান প্রযোজ্য যদি কোন নারী নামায ছাড়া দোয়া করেন: "আল্লাহ্‌ যেন তার স্বামীকে সংশোধন করে দেন"। এই দোয়া কিংবা এ অর্থবোধক অন্য দোয়া নামাযের বাহিরে। তদ্রূপ কোন পুরুষ যদি তার স্ত্রীর সংশোধনের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করেন; বিশেষ কোন আয়াতকে নির্দিষ্ট না করে কিংবা কোন নামাযকে নির্দিষ্ট না করে— তাহলে সেটা জায়েয; এতে কোন অসুবিধা নেই।

দোয়া হচ্ছে যে কোন উদ্দেশ্য হাছিল ও বিপদ থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় মাধ্যম; তবে বিশেষ কোন পদ্ধতি নির্ধারণ ব্যতিরেকে এবং বিশেষ নামায ব্যতিরেকে।

দুই:

শরিয়তে পারস্পারিক বিবাদ মীমাংসা করার বড় ধরণের গুরুত্ব রয়েছে। এ মীমাংসার কারণে মহা প্রতিদান নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমনিভাবে পারস্পারিক সম্পর্ক নষ্ট করা থেকে কঠিন হুশিয়ারী এসেছে। আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: "আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও সদকার চেয়ে উত্তম মর্যাদার সংবাদ দিব না? তারা (সাহাবীরা) বলল: অবশ্যই। তিনি বললেন: পারস্পারিক বিবাদ মীমাংসা করা। কেননা পারস্পারিক সম্পর্ক নষ্ট করা হচ্ছে মুণ্ডনকারী (দ্বীনকে ধ্বংসকারী স্বভাব)।[সুনানে তিরমিযি (২৫০৯)] তিরিমিযি বলেন: এটি সহিহ হাদিস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন: "সেটা হচ্ছে- মুণ্ডনকারী। আমি বলছি না: চুল মুণ্ডনকারী; কিন্তু ধর্মকে মুণ্ডনকারী।[সমাপ্ত]

ঘরের সংশোধন করার জন্য শরিয়ত কিছু উপায় নির্ধারণ করেছে:

১। উত্তম স্ত্রী নির্বাচন করা।

২। ঘরকে আল্লাহ্‌র যিকিরের স্থল বানানো।

৩। ঘরে আল্লাহ্‌ শরিয়ত কায়েম রাখা।

৪। ঘরবাসীদের ঈমানী শিক্ষা দান করা।

৫। ঘর থেকে শয়তানকে তাড়ানোর জন্য ঘরের মধ্যে নিয়মিত সূরা বাক্বারা তেলাওয়াত করা।

৬। যার দ্বীনদারির প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া যায় না তাকে ঘরে প্রবেশ না করানো।

৭। ঘরের গোপনীয়তা সংরক্ষণে রাখা।

এবং শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ লিখিত "ঘর সংশোধনের চল্লিশ উপায়" বই-এর আরও যে মাধ্যমগুলো গ্রহণ করা ও ব্যাখ্যা করাকে আপনি দরকার মনে করেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব