আলহামদু লিল্লাহ।.
যারা হাজী নন তাদের জন্য এই দিন রোযা রাখা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরাফার দিনের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: “বিগত ও আগত বছরের পাপ মোছন করে”[সহিহ মুসলিম (১১৬২), সহিহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে: আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করছি যে, আগের বছরের ও পরের বছরের গুনাহ মোছন করবে]
ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে (৬/৪২৮) বলেন -যেটি শাফেয়ি মাযহাবের কিতাব-: “এ মাসয়ালার হুকুম হচ্ছে- ইমাম শাফেয়ি ও ছাত্ররা বলেন: যারা আরাফায় নেই তাদের জন্য আরাফার দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব”।
পক্ষান্তরে, হজ্জপালনকারী যিনি আরাফার ময়দানে হাজির তার ব্যাপারে মুখতাসার গ্রন্থে রয়েছে ইমাম শাফেয়ি ও মাযহাবের অন্য আলেমগণ বলেন: উম্মে ফযল এর হাদিসের ভিত্তিতে তার জন্য সেদিন রোযা না-রাখা মুস্তাহাব। আমাদের অন্য একদল আলেম বলেন: হজ্জপালনকারীর জন্য এই দিন রোযা রাখা মাকরুহ। যারা এ অভিমত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন তারা হচ্ছে- দারেমী, বন্দানিজি, মুহামিলি ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে, গ্রন্থকার ‘তানবীহ’ নামক গ্রন্থে এবং অন্যান্য আলেমগণ”[সমাপ্ত]
ইবনে কুদামা (রহঃ) ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে (৪/৪৪৩) বলেন যেটি হাম্বলি মাযহাবের গ্রন্থ: “এটি একটি মহান ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। পবিত্র ঈদের দিন। এর মর্যাদা মহান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এ দিনের রোযা দুই বছরের গুনাহ মোছন করে।”[সমাপ্ত]
ইবনে মুফলিহ (রহঃ) ‘আল-ফুরু’ নামক গ্রন্থে (৩/১০৮) বলেন:
“এটি একটি মহান ও সম্মানিত দিন। পবিত্র ঈদের দিন। এর মর্যাদা অনেক বড়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ হাদিসে এসেছে- এ দিনের রোযা এক বছরের গুনাহ মোছন করে।”[সমাপ্ত]
ইবনে মুফলিহ (রহঃ) ‘আল-ফুরু’ গ্রন্থে (৩/১০৮) বলেন- এটি হাম্বলি মাযহাবের কিতাব-: যিলহজ্জের দশদিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। ৯ তারিখের রোযাটি সবচেয়ে বেশি তাগিদপূর্ণ। এ দিনটি হচ্ছে- আরাফার দিন। ইজমার মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত।[সমাপ্ত]
হানাফি মাযহাবের কিতাব ‘বাদায়েউস সানায়ি’ গ্রন্থে (২/৭৬) গ্রন্থকার ‘কাসানি’ বলেন:
“যারা হাজী নন তাদের জন্য আরাফার দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। এ দিনে রোযা রাখা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে অনেক হাদিস বর্ণিত হওয়ার কারণে। কারণ অন্যদিনগুলোর উপর এদিনের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। হাজীর জন্যেও এদিনের রোযা রাখা মুস্তাহাব; যদি রোযা রাখার কারণে হাজী দুর্বল হয়ে আরাফায় অবস্থান ও দোয়া করা থেকে বাধাগ্রস্ত না হয়। যেহেতু রোযা রাখার মাধ্যমে এ দুটো নেককাজ একত্রে আদায় করা যায়। আর যদি রোযা রাখতে গিয়ে হাজী দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে রোযা রাখা মাকরুহ। কারণ এদিনে রোযা রাখার ফযিলত অন্য বছর অর্জন করা সম্ভব; স্বভাবতঃ সম্ভব হয়। কিন্তু, আরাফায় অবস্থান ও দোয়া করার ফযিলত সাধারণতঃ সাধারণ মুসলমানের ক্ষেত্রে জীবনে একবারের বেশি অর্জন করা সম্ভব হয় না। তাই সে ফযিলতটি অর্জনে সচেষ্ট হওয়া উত্তম।”
মালেকী মাযহাবের আলেম খিরাশী কর্তৃক রচিত ‘শারহু মুখতাসার খলিল’ রয়েছে:
“হজ্জ না করলে আরাফার দিনে রোযা রাখা এবং যিলহজ্জের দশদিন রোযা রাখা” ব্যাখ্যা: গ্রন্থকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে- যিনি হাজী নন তার জন্য আরাফার দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। আর হাজীর জন্য রোযা না-রাখা মুস্তাহাব; যাতে করে দোয়া করার জন্য শক্তি থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জের সময় রোযা রাখেননি।”[সমাপ্ত]
‘হাশিয়াতুদ দুসুকী’ গ্রন্থে এসেছে-
অতঃপর তাঁর কথা: ‘এবং আরাফার দিনে রোযা রাখা মুস্তাহাব...’ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- আরাফার দিনে রোযা রাখা জোরালো-মুস্তাহাব; নচেৎ রোযা রাখাটাই একটি মুস্তাহাব আমল।”
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আরাফার দিন হজ্জপালনকারী নন ও হজ্জপালনকারীর জন্য রোযা রাখার হুকুম কি?
উত্তরে তিনি বলেন: যিনি হজ্জপালন করছেন না তার জন্যে আরাফার দিন রোযা রাখা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরাফার দিন রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: “আমি আল্লাহর নিকট প্রত্যাশা করছি যে, বিগত বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।” অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে “গত বছর ও পরের বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”
পক্ষান্তরে, হাজীদের জন্য আরাফার দিন রোযা রাখা সুন্নত নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায়ী হজ্জকালে আরাফার দিন রোযা রাখেননি। সহিহ বুখারীতে মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার দিন রোযা রেখেছেন; নাকি রাখেননি এ ব্যাপারে কিছু মানুষ সন্দেহে ছিল। তখন আমি তাঁর জন্য এক পেয়ালা দুধ পাঠালাম; তখন তিনি আরাফার ময়দানে অবস্থান করছিলেন। তিনি দুধ পান করলেন; লোকেরা তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিল।”[সমাপ্ত]
[মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, খণ্ড ২০, প্রশ্ন ৪০৪]
তাই হজ্জপালনকারীর জন্য আরাফার দিন রোযা রাখা মাকরূহ; মুস্তাহাব নয়। অতএব, উল্লেখিত বক্তা যদি হজ্জপালনকারীকে উদ্দেশ্য করে থাকেন তাহলে তাঁর কথা ঠিক। আর যদি তার উদ্দেশ্য হয় যে, যারা হজ্জ পালন করছে না তাদের জন্য আরাফার দিন রোযা রাখা শরিয়তসম্মত নয়; তাহলে এটি সুস্পষ্ট ভুল এবং ইতিপূর্বের আলোচনায় সহিহ সুন্নাতে সাব্যস্ত বিষয়ের বরখেলাফ।
আল্লাহই ভাল জানেন।